রাজধানী ঢাকার ট্রাফিক সমস্যা নতুন কিছু নয়। তবে সম্প্রতি রাস্তায় পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়ে এক ব্যক্তির নিজের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া এখানে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামসুল আলম বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া রাস্তায় শৃঙ্খলা আসবে না। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিজ্ঞানের কোনো ছোঁয়া নেই। আমাদের রাস্তার ধারণক্ষমতা কতটা আছে, কতসংখ্যক যানবাহন চলতে পারবে অথবা ভারী যানবাহন চালানোর মতো চালক আছে কি না, এসব না দেখেই সব অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।’
বুয়েটের এই শিক্ষক বলেন, ‘যার ফলে সিস্টেমটা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে এবং এখানে অরাজকতা বা নৈরাজ্য এমন পর্যায়ে চলে গেছে, যা আর ম্যানেজ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ তার গবেষণা থেকে তিনি বলেন, ‘যানজটের জন্য গত কয়েক বছরে মানুষ মোটর বাইকের দিকে ঝুঁকেছে। এখন নগরীতে যানবাহনে ৫৬ শতাংশই মোটরসাইকেল। একারণে শুধু শাসন করে, চাপ দিয়ে বা বড় আইন করে রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না।’
ঢাকার রাস্তাগুলোতে ডিজিটাল সিগন্যাল বসানো হয়েছিল ২০১৩ সালে। কিন্তু সেগুলো কোনো কাজে আসেনি। পুলিশ ম্যানুয়ালি সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করছে।
অধ্যাপক আলম জানান, ঢাকার রাস্তার বাস্তবতা অনুযায়ী সেই উদ্যোগ ছিল না। সে কারণে তা ব্যর্থ হয়েছে।
ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মুনিবুর রহমানও বলেছেন, ঢাকার রাস্তার চরিত্র পর্যবেক্ষণ করে ট্রাফিক সিগনালের ব্যবস্থা করা উচিত। তিনি বলেন, ‘ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিকের চরিত্র একেক জায়গায় একেক রকম। গাড়ির ধরন একেক জায়গায় একেক রকম। কোথাও যন্ত্র ছাড়া আবার কোথাও যন্ত্রচালিত গাড়ি চলে। ফলে এক অঞ্চলের সিগনাল সিস্টেম আরেক অঞ্চলে কাজ করবে না। সেজন্য ওই পদ্ধতিটা ইউনিক ছিল না। এখন সমন্বয় করে রাস্তার চরিত্র বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীরা মনে করেন, শুধু সিগনালই নয়, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সবকিছুই চলছে। সেজন্য সেখানে পুলিশের হয়রানি করার সুযোগ যেমন থাকে, তেমনি আইন ভাঙার প্রশ্নও আসে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অন্যতম ফারিহা ফতেহ বলছেন, রাস্তার নিয়ন্ত্রণ ডিজিটাল সিস্টেমে আনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘আইন ঠিকভাবে প্রয়োগ না হলে সাধারণ মানুষ আসলে অসহায় হয়ে পড়ে। এখানে রাস্তায় শৃঙ্খলা রাখার জন্য সব বিষয়ে মানুষের ওপর নির্ভরর করতে হয়। আমাদের কিছুই মেকানিক নয়। সে কারণে মানুষের সীমাবদ্ধতা থাকে এবং সমস্যা হয়।’
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মুনিবুর রহমান দাবি করেন, রাস্তা কম থাকা, পার্কিং সুবিধা না থাকাসহ সব সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করেই পুলিশ রাস্তায় ব্যবস্থা নেয়। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে তাও তদন্ত করা হয়।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যানবাহনের চালকদের আর্থিক বিষয়ও বিবেচনা করি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে। কারণ তারা বেশির ভাগই সচ্ছল নয়। ফলে উদ্দেশ্যমূলক অপরাধ না হলে বা গুরুতর না হলে তাদের শুধু সতর্ক করা হয়।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, ঢাকার বাস টার্মিনালগুলো সরিয়ে নিয়ে সেখানে নগরীর ভেতরের যানবাহনের জন্য ব্যবহারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মেট্রেরেল হলে সমস্যা থাকবে না। আর এলিভেটেট রেলের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া নগরীর দুই সিটি করপোরেশন মিলে মহাখালীর বাস টার্মিনাল সরিয়ে নিয়ে আব্দুল্লাহপুরে ৪০ একর জমি নেওয়া হচ্ছে। গাবতলীর বাসটার্মিনাল সরানো হচ্ছে হেমায়েতপুরে। এগুলো হলে অনেক সুবিধা হবে।
তবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে কবে-তার কোনো সময়সীমা কর্তৃপক্ষ বলতে পারছেন না।