মেহেদী হাসান রিপন,বাঘারপাড়া উপজেলা প্রতিনিধিঃ
বয়স কত হবে-বড়জোর ২০ কি ২৫! সারাক্ষণ অপেক্ষায় থাকেন একটি আহবানের, ‘একজন মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন।’ এমন খবর পেলেই অসুস্থ মানুষের রক্ত জোগাড়ে ছুটে বেড়ান একদল তরুণ তরুণী । যখন যার রক্ত প্রয়োজন, তখন তার জন্য রক্ত জোগাড় করে দিচ্ছেন তাঁরা। রাতদিন যেকোনো মুহূর্তে রক্ত সংগৃহীত হয়ে যাচ্ছে। শুধু সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সংগঠনটির নাম ‘বাঘারপাড়া ব্লাড ব্যাংক’। সংগঠনের সদস্যরা রোগীর ঠিকানা নিয়ে পৌঁছে যান হাসপাতালে। রক্ত দিয়ে ফেরেন হাসিমুখে।
বাঘারপাড়া উপজেলার একদল তরুণদের এখন এটি মুখ্য কাজ। স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে গড়ে তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রথম দিকে ওই তরুণেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) গ্রুপ তৈরি করে এক হয়েছেন। ‘বাঘারপাড়া ব্লাড ব্যাংক’ নামের ওই গ্রুপের তরুণেরা রক্তদানে সাড়া দিয়ে ছুটে বেড়ান মানুষের জীবন বাঁচাতে। এমনও হয়েছে রোগীর নামধাম জানেন না, রক্ত দিয়ে চলে এসেছেন। এ রকম অনলাইনভিত্তিক একটি সংগঠন দুশ্চিন্তায় ভরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রক্তদাতা জোগাড় করে তাঁদের শঙ্কা দূর করতে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন
বাঘারপাড়া ব্লাড ব্যাংকের সভাপতি সৈয়দ সৈয়দ হাসিবুল ইসলাম শোনান তাঁদের এক হওয়ার পটভূমি। শিক্ষাজীবন শেষে চাকরি করেন। তখন মাথায় জেঁকে বসে যশোরের রক্তের সংকট নিরসন করে উন্নয়ন সম্ভাবনার কথা। সেভাবেই ২০১৯সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বাঘারপাড়া ব্লাড ব্যাংক ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করেন। এরপর ফেসবুকে কথাবার্তা। একপর্যায়ে ওই গ্রুপে রক্ত প্রয়োজন দাবি করে মন্তব্য করেন একজন ব্যক্তি, তাতে সাড়া দেন
সৈয়দ হাসিবুল ইসলাম আরো বলেন , ‘আগে থেকে কারো সঙ্গে সেরকম সখ্যতা গড়ে ওঠেনি। বিভিন্ন সময় গ্রুপে রক্ত প্রয়োজন দাবি করে মন্তব্য করেন অনেকেই। এতে সাড়া দিয়ে রক্ত দিতে গিয়ে পরিচয়। তারপরে রক্তদাতাদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ হতো। একটা সময় চিন্তা করলাম, নিজেদের একটা প্ল্যাটফরম দরকার। এরপর সবার সঙ্গে আলোচনা। অবশেষে ২০১৯ সালে বাঘারপাড়া ব্লাড ব্যাংকের যাত্রা শুরু।’
কীভাবে এত চাহিদা সামাল দেন? জানতে চাইলে মুখে হাসি টেনে গ্রুপটির অ্যাডমিনদের মধ্যে অন্যতম একজন মোঃ রায়হান লস্কার বলেন, ‘আমাদের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা এখন অনেক বেশি। সামাল দেওয়া কঠিন বটে, তবে পারছি তো। কারণ, আমাদের বড় শক্তি অনুসারীরা (ফলোয়ার)। ফেসবুকে রক্তের আহবান পোষ্ট করলেই অনুসারীরা যোগাযোগ শুরু করেন। এরপর আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী রক্তদাতা পৌঁছে যান রোগীর কাছে। অবশ্য রোগীর বিস্তারিত জেনে তারপর আমরা উদ্যোগ নিই।’
জানতে চাইলে বাঘারপাড়া ব্লাড ব্যাংকের মডারেটর নাঈম হাসান বলেন, ‘আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। সেই প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও আমরা মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে গিয়েছি। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে মানুষজন স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটান। অনেকে হাসপাতালে অসুস্থ স্বজনকে রেখে বাড়িতে ঈদ করতে চলে যান। আমরা এমন রোগীর পাশে দাঁড়াই। রক্তের ব্যবস্থা করে দিয়ে তাঁর সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করি। অনেক সময় গভীর রাতে অনেকে রক্তের জন্য ফোন করেন। তখন রক্তদাতা সংগ্রহ করে দিতে হয়। রক্ত পাওয়ার পর রোগীকে যখন সুস্থ হতে দেখি, তখন সব কষ্ট ভুলে যাই।’
সংগঠনটির রক্তদান করা ছাড়াও শীতবস্ত্র বিতরণ, ব্লাড গ্রুপিং, রক্তদানে উৎসাহিত করা ও থ্যালাসেমিয়া মুক্তির লক্ষ্যে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, অসহায় রোগীদের সাহায্য করা ও অসহায়দের মধ্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান, রমজানে ইফতার প্রদান।
যশোর জেলা ছাত্রমৈত্রী সভাপতি শ্যামল শর্মা মুঠো ফোনে এ-ই প্রতিবেদক কে জানান, স্বেচ্ছাসেবী এই রক্তদাতা সংগঠন অসহায় মানুষকে রক্ত দিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছে। শুধু রক্তদান নয়, অনেক ক্ষেত্রে হতদরিদ্রদের ওষুধ কেনাসহ টাকা-পয়সা দিয়ে সহায়তা করছে। তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজনের সময় এ সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহজেই রক্ত পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচাতে তরুণদের এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।’